সোমবার, ২৪ মার্চ, ২০২৫

(২৫৭) ভারতীয় সমাজে নারীর উত্তরণ ও অবমননের মানচিত্র -২য় পর্ব

 (২৫৭)  ভারতীয় সমাজে নারীর উত্তরণ ও অবমননের মানচিত্র -২য়  পর্ব 


রবীন মজুমদার( অঙ্কনে )

প্রথম সংখ্যার পর  ..................................................

তথ্যের উপাদান

 নারী স্বাধীনতার কথা উঠলে  মন্তব্য উড়ে আসে, বৈদিক যুগে নারীদের স্থান বেশ উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত ছিল, যা একবারে ধরাছোঁয়ার বাইরে।  যে পাতা ইতিহাসের কান্ড ছাড়া প্রস্ফুটিত হয় না, আর যাকে সমৃদ্ধ করে  বহু উপাদান ,  তবে সে ইতিহাস নামে  ভূষিত হয়। তার সঙ্গে  থাকবে পুরাণ, প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান, নৃবিজ্ঞানের প্রামাণ্য দলিল,  শিলালিপি,  বৈদিক সাহিত্য, বৌদ্ধ সাহিত্য আর সঙ্গে রামায়ন ও মহাভারত।  অনুক্রমটা যদি প্রাচীনতর সাহিত্য দিয়ে শুরু করতে হয়, তাহলে সর্বাজ্ঞে আসবে ঋগ্বেদ তারপরে অন্যান্য সাহিত্য।  

তৎকালীন সমাজে নারীর অবস্থান কখন মুক্ত বিহঙ্গের মতো খোলা আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে আবার কখন সে  বন্দী হয়ে খাঁচার মধ্যে এপ্রান্ত থেকে ও প্রান্তে দাঁড়ের উপর দিয়ে হেটে বেড়াচ্ছে আবার কখন মনমরা হয়ে খাঁচার একপ্রান্তে চুপ করে বসে আছে। পলকে পলকে এক বৈচিত্রময় জীবন সমাজ তাদের উপহার দিয়েছিল তার কারণগুলির মুলে ছিল এক ধরনের ঘৃণ্য শ্রেণীবোধ।   

যাযাবর জীবন  থেকে  গ্রামীণ জীবনে উত্তরণ 

গঙ্গা-যমুনার অববাহিকার অনতিবিলম্বে সবুজ কার্পেটে বোনা উর্বরা জমিতে ফসল বুনতে বুনতে তারা ভুলেই গেছিল তাদের রুক্ষ জমির শুষ্ক আবহাওয়াতে তারা কত দিনই অতিক্রান্ত করেছে। পরিবেশের সাথে জীবনের এক অবিচ্ছেদ্দ আকর্ষণ এবং সেই কারণে জীবনের যাত্রা পথের কতনা পরিবর্তন। যারা পূর্বে  লিঙ্গ ভেদাভেদ ভুলে তারা জীবিকার্জ্জনের জন্য একসাথে কত না যুদ্ধে তারা অবতীর্ন হয়েছিল। সম্পত্তি নামক কোন পার্থিব সম্পদ আছে, সেই ধারনাই তাদের ছিল না।   তাদের অন্তরে বহুদিনধরে আত্মগোপন করে থাকা একটা বাসনা উজ্জীবিত হলো পরিবর্তিত সামাজিক ভাবধারার স্পর্শে।  

 পরিবর্তন 

প্রত্যেক সমাজের আর্থিক অবস্থানটা সামাজিক পরিবর্তনের দায়ভার গ্রহণ করে। আর্য্যদের ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয় নি। যেহেতু , নারী ও পুরুষ তার অঙ্গ, তাই পরিবর্তনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব তাদের উপর অবশ্যিই বর্তাবে। 

 ধীরে ধীরে মন থেকে আগের স্মৃতিগুলি কোথায় যেন হারিয়ে গেলো। সেই শুনসান জায়গা ভরাট হতে শুরু করলো  একের পর এক ঘটনার বহমান স্রোতে। সভ্যতা নামক শব্দটা বেশ জটিলতায় ভরা এক সামাজিক ব্যবস্থাকে  ইঙ্গিত করে।  পরিবেশ এবং সমাজে স্তরে স্তরে সাজানো মানব-মানবীদের  উপর কোথাও তার  নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি ও  যেমন থাকে আবার পাশাপাশি  শিথিলতাকে প্রশ্রয় দিয়ে যায়।

কোন কিছু গড়ার কিছু প্রাথমিক শর্ত থাকে তা হচ্ছে পুরাতনকে ভাঙ্গার। সেদিনের আর্য্য সমাজে  এই ভাঙ্গা গড়ার খেলায় প্রথম গোষ্ঠী ও কৌম ভেঙ্গে হলো কূল। আবার কূল থেকে  যৌথ পরিবার তারপরে সেটি গিয়ে প্রতিষ্ঠিত হলো একপুরুষের পরিবারে। এটি হল অনেক সামাজিক পুনর্গঠনের একটি ধাপ। 

সেদিনের জীবন-জীবিকার প্রথম সারিতে যারা ছিল সেই, পশুপালন, শিকার ইত্যাদি পরিবর্তিত  হল চাষ-আবাদে।  ফসল চাষের সাথে উৎপাদন শব্দটি ভীষণ ভাবে জড়িত।   উৎপাদনের ফলাফল চূড়ান্ত ভাবে  নির্ণয় করা হয় অর্থ মূল্য দিয়ে। সামাজিক ক্ষেত্রে একটা ধারণা প্রচলিত হলো যে, উৎপাদন ব্যবস্থায় যারা প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আছে অর্থাৎ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যাদের অবদান সব থেকে বেশি, তারাই গুরুত্ব পেতে শুরু করলো। আরেকটু ভেঙে বলা যেতে পারে, যে শ্রমকে বাজারজাত করা যায় সেটাই আক্ষরিক অর্থে সফল শ্রম আর  গৃহের শ্রমকে  বাজারজাত করা যায়না বলে  সে বিফল শ্রমের মর্য্যাদা পায় ।  

বন্ধনে বন্দিত্ব 

 উৎপাদনে অপর্যাপ্ত অংশগ্রহণে নারীকে শুধুমাত্র গৃহকর্মে সমাজ আবদ্ধ করে রাখলো। যে উৎপাদনে অংশগ্রহণ করেনা, সে অর্থমূল্য উপার্জ্জন করতেও সক্ষম নয়, জীবন-জীবিকার প্রশ্নে সে পরনির্ভরশীল, যেমন গৃহে ফাইফরমাশ খাটে সেই শূদ্রজাত স্ত্রী-পুরুষের মতো। বুৎপত্তিগত অর্থ ধরলে 'ভার্যা' অর্থাৎ স্ত্রী আরেকটি অর্থে ভরনীয়া এর সাথে নারী ও শূদ্রকে এক পঙ্ক্তিতে বসানো যায়, কেননা শূদ্রদের অন্ন গৃহকর্তার উপরেই নির্ভরশীল। অর্থনীতি ঘুরে বেড়ায় মাঠেঘাটে, সে প্রত্যক্ষ করে উৎপাদন আর শ্রমকে কিন্তু গৃহের অন্দরে প্রত্যহ যে যে শ্রম বিতরণ হয় আর যে শ্রম বিনা বাহ্যিক উৎপাদন এক পা ও এগোতে পারতো না, তাকে সে দেখতেই পারেনা। কেননা, গৃহদ্বারে  এক অদৃশ্য পাহারাদার বসে আছে  , যে আগাপাশতলা পুরুষতন্ত্রে বিশ্বাসী।  সেই আলোবাতাসহীন গৃহে সমাজের পাশবিক সংস্কারের চাবুকে রক্তাক্ত  হয় নারী আর শূদ্ররা। এও সভ্যতার অভূতপূর্ব নিদর্শন, আলোর নীচে একটা নিকষ কালো অন্ধকার। যারা সমর্থ, তারা আজও  সেই পাহারাদারদের দরজায় বসিয়ে ঘরের অন্দরে সেই পরম্পরাকে বজায় রেখেছে। কখনো বেরিয়ে আসা সত্য ঘটনাগুলিকে রাষ্ট্র ধামাচাপা দিয়ে যাচ্ছে, পাছে তাদের কাল্পনিক অগ্রগতির খতিয়ানটা  কালিমালিপ্ত হয়, সভ্যতার পতাকাটা যেন মিথ্যার বাতাসে পতপত করে উড়তে পারে। 


ক্রমশঃ 
ব্লগার -রবীন মজুমদার 
তারিখ -২৫/০৩/২৫
rabinujaan.blogspot.com ক্লিক করে যে কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে অন্যান্য ব্লগগুলি পড়া যাবে। 


1 টি মন্তব্য:

Ani বলেছেন...

পরেরটার জন্য।

ujaan

(২৬১) ভারতীয় সমাজে নারীর উত্তরণ ও অবমননের মানচিত্র - ষষ্ঠ পর্ব

( ২৬১)  ভারতীয় সমাজে নারীর উত্তরণ ও অবমননের মানচিত্র - ষষ্ঠ পর্ব    পঞ্চম পর্বের পর ০০০০০০০০০০০০০০০০০০ যুগে যুগে  কুসংস্কার শাসকের শোষণের অন...