(২১৫) সীতা কি পুরুষ শাসিত সমাজে নারী নির্যাতনের শিকার ?
ভারতবর্ষ কি এখনো রামায়ন ও মহাভারতময় (তৃতীয় পর্ব)
বিচারের বাণী সেদিনও কি নীরবে কেঁদেছিল ? স্বামীজীর নির্দেশিত পথের আলোকে যদি শিক্ষার ক্ষেত্রে দিশা নির্বাচনের জন্য ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক পথের মধ্যে কোনটা গ্রহণ করাটা সমীচীন হবে , সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব পাঠকের উপরই বর্তাবে। ইতিবাচক অর্থাৎ বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে গ্রহণ আর নেতিবাচক অর্থাৎ বিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল, যা আসলে মানুষকে ভীষণ দুর্ব্বল করে দেয়।
প্রসঙ্গ যেখানে, রামায়ণে বর্ণিত রাবণ কর্তৃক বনবাসী রামের সহধর্মিনী সীতাকে অপহরণ এবং তাঁর পরবর্তী ঘটনাবলিকে আজকের পটভূমিতে কি ভাবে দেখা হতো , তারই একটা ইঙ্গিত।
প্রশ্ন উত্থাপন হলেই উত্তরের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় থাকেনা।
প্রথম প্রশ্ন- যদি কোনো বিবাহিত অথবা অবিবাহিত নারীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে অপহরণ করা হয় বা তার প্রতি বলাৎকারে মতো ঘটনা সংগঠিত হয়, সে ক্ষেত্রে শাস্ত্র কি বিধান নির্দ্দেশ করেছিল রামায়ণ ও মহাভারতের যুগে।
দ্বিতীয় প্রশ্ন- রামায়ণে সীতার অগ্নি পরীক্ষাটি কি একান্তই রূপক ছিল ?
তৃতীয় প্রশ্ন-সীতাকে কি রাবণ যখন হরণ করেছিল, তখন কি তার মধ্যে গর্ভ ধারণের সূচনা হয়েছিল? রাম কি লব-কুশের জৈবিক পিতা ?
এর উত্তর খুঁজতে গেলে রামায়ন রচনার পূর্বে যে সব শাস্ত্র রচনা হয়েছিল, সেখানে অবলোকন করতে হবে।
প্রথম প্রশ্নের উত্তর অত্রি সংহিতায় ( খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ সালে ঋগ্বেদের পঞ্চম মন্ডলে এই সংহিতার ১৯৭-১৯৮) ( রামায়ণের আনুমানিক সময়কাল খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ সালে ) বলা আছে " ন ত্যাজ্যা দুষিতা নারী"। কোন নারীকে বলপূর্বক অপহরণ করা হয়, তবে সেই দুষিতা নারীকে ত্যাগ না করার বিধান দেওয়া আছে। নারীরা সফ্ট টার্গেট হবার দরুণ পশ্চিম দিক থেকে সিন্ধু দেশে অসংখ্য আক্রমণের শিকার হতো এবং শারীরিকভাবে নিগৃহিতও হতো, তাদের সমাজ জীবনের মূল স্রোতে ফিরিয়ে নিয়ে আসা ছিল একটা চ্যালেঞ্জ। দেবলস্মৃতিতে তার যথার্থ সমাধান বর্ণিত আছে।
দ্বিতীয় প্রশ্নের পরিপেক্ষিতে বলা যায় , সাধারণভাবে আমরা অগ্নিকে জানি, সে যেমন তার তাপে দগ্ধ করে উপাদেয় খাদ্য পরিবেশন করে , আবার সময়ে সময়ে ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাহলে অগ্নির মধ্যে বস্তুর রূপান্তর করার ক্ষমতা বিদ্যমান। বর্তমানকালে কিছু অগ্নিনিরোধক রাসায়নিক আবিষ্কৃত হবার কারণে, আগুনকে প্রতিহত করা যায়। কিন্তু সেদিন কি বিজ্ঞান এই রাসায়নিক আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছিল ? যদি হয়ে থাকতো তা হলে কাহিনীর স্বার্থে রূপকের ব্যবহার তো প্রচলিতই ছিল, যেমন মহাভারতে দ্রৌপদীকে অগ্নি থেকে উৎপন্না হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কথিত আছে অগ্নিদেবতা সীতার অগ্নিপরীক্ষাটির ক্ষেত্রে আসল-নকল সীতার ভ্রম উৎপন্ন করে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়েছিলেন। হয়তো সেটা জাদুও হতে পারে। আদতে অগ্নি দুটি বস্তুর যৌগিক ক্রিয়ার ফল। যৌগিক বস্তু ঈশ্বর হতে পারে না। তাই সে মানুষের দেওয়া দেবতা উপাধিতে ভূষিত। যেখানে মানুষ তাকে দিয়ে যা কিছুই করিয়ে নিতে পারে।
তৃতীয় প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় , যদি লোক চক্ষুর অন্তরালে রাম যদি বাল্মীকির তপোবনে সীতার সাথে মিলিত অর্থাৎ নারী-পুরুষের জৈবিক সম্পর্ক স্থাপন না হতো তাহলে লব-কুশের জন্ম কি ভাবে হলো তার প্রশ্ন থেকে যায়। এরই সঙ্গে রামায়ণে কোথাও উল্লেখ করা নেই গর্ভাবস্থায় সীতাকে রাবন অপহরণ করেছিল। যদি বাল্মীকির তপোবনে রামের গোপন অভিযানের কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হয়, তাহলে দ্বিতীয়টি পরে থাকে এবং যাঁর দায়িত্ব সম্পূর্ণ রূপে রাবন বা অন্য কোনো অনুল্লেখিত পুরুষের উপর বর্তায়। অথচ অনেক ভারতীয় শাস্ত্র রামায়ণ রচনার বহুপূর্বে সমাজে সব রকমের ব্যতিক্রমী সমস্যার যুক্তিপূর্ন সমাধান দিয়ে রেখছিলেন। শোনাযায়, তখনকার রাজ্য-সমাজ-সংসার সেই বিধানকেই অনুসরণ করতো। তবে কি প্রচলিত নিয়মকে তাঁরা লংঘন করেছিলেন কিংবা তার পিছনে কি কোন না বলা অজানা কারণ ছিল ?
ব্লগার -রবীন মজুমদার
তারিখ ১২/০৬/২৪ সকাল -৮:৪১ মিঃ
https://rabinujaan.blogspot.com
ক্লিক করে যে কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে অন্যান্য ব্লগগুলি পড়া যাবে।
২টি মন্তব্য:
বাহ। একটা অন্য দিগন্ত খোলা আলোচনা। চলুক বিশ্লেষণ
বাহ। একটা অন্য দিগন্ত খোলা আলোচনা। চলুক বিশ্লেষণ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন