শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০২৪

(২১৮) জগাখিচুড়ি -চতুর্থ সংখ্যা

(২১৮) জগাখিচুড়ি -চতুর্থ   সংখ্যা





 ১) বিভাজনের ক্রম বিবর্তনবাদ 

বিভাজনের সূত্রপাত হয়েছিল সেই দিন, যে দিন এই বিশ্বব্রম্মান্ডের সৃষ্টি কর্তা প্রাণী সৃষ্টি করার জন্য অব্যক্ত অবস্থা থেকে  ব্যক্ত হলেন।  ভারতীয় দর্শন অনুযায়ী সুপ্রিম পাওয়ার বা পরম ব্রহ্ম  নিজেকে বিভাজিত করে সৃষ্টি করলেন প্রকৃতি আর পুরুষকে।  তিনি হয়ে রইলেন পুরুষ হিসাবে।  এই পুরুষ হলেন চৈতন্য।  সেদিন থেকে চেতন আর অচেতনের দ্বন্দ্ব চিরন্তন  আর সেই পরস্পর বিরোধী সত্ত্বার পূর্ণাঙ্গ রূপ হল এই মানুষ।  শিশুর জন্মকালীন মাতা তাঁর নাড়ীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন  করে বিশ্ব প্রকৃতির কাছে একাকী ছেড়ে দেয়, সেও এক ধরনের বিভাজন। এই আপাত খণ্ডিত ভাবনাকে , কতখানি আলোর সংস্পর্শে আসলে  বিভাজনের  ভাবনার ভূত মানুষের ঘাড় থেকে নামবে। রবি ঠাকুরের গানের সাথে গলা মিলিয়ে বলতে হবে -এই অন্ধকারের উৎস-হতে উৎসারিত আলো / সেই  তো তোমার আলো! /  সকল দ্বন্দ্ববিরোধ -মাঝে জাগ্রত  যে ভালো / সেই তো তোমার ভালো। অখন্ড ভাবনাই  খণ্ডিত বা বিভাজনের ভাবনার বিয়োগের চূড়ান্ত রূপ। 
                        ********************************
মিথ্যা কি বৈরাগ্যের প্রেরণা -

" অশ্বত্থামা হত ইতি গজ"- এই মিথ্যা বাক্যটি চিরন্তন বৈরাগ্যকে সংজ্ঞায়িত করে। যেই শব্দের আঘাতে প্রথমে পিতা পরে একজন সেই নির্ভীক সৈনিকের হাত থেকে অস্ত্র খসে পড়ে যায়। যে কোনো প্রতিযোগিতায় বা সংগ্রামে এই বাক্যটি প্রতিযোগীকে মানসিক ভাবে দুর্বল করে তোলে। তারই প্রয়োগ দেখলাম, সাধারণ মানুষের ভোটদান পর্বে শাসকের " সমীক্ষা " নামক মন গড়া অস্ত্রের প্রয়োগে।
********************************
প্রশ্ন

জীবন যত দিন থাকবে, তত দিন শত্রুও জীবনের অন্দরে স্থায়ী আবাসিক হয়ে থাকবে। অর্জ্জুন একদিনেই কি করে তার শত্রু নিধন করবে ? এই বাক্যটা অর্জুনের মুখে বসিয়ে দিয়ে স্বর্গ দ্বারের মুখে তার প্রাণ হরণ করাটা অবশ্যিই প্রশ্নের সম্মুখীন।
********************************
দ্রৌপদীর অবস্থান সঠিক না বেঠিক ছিল -

পৃথিবী একসাথে একটিমাত্র গ্রহ অর্থাৎ সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে পারে। তার কি একইসাথে একাধিক গ্রহের চারিদিকে ঘুরে বেড়ানো বাস্তবে সম্ভব ? যদি সম্ভব না হয় তাহলে দ্রৌপদীর অবস্থানটি ঠিক ছিল। অর্জুনকে কেন্দ্র করে দ্রৌপদীর আবর্তনের ফল স্বরূপ পাণ্ডব সংসারে প্রবেশ , তার পর সেই সংসারের প্রোটোকল অনুযায়ী অন্যান্য ভাইদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পড়া। অন্য ভাইদের সাথে তাঁর সম্পর্কের কোন আবর্তন হয়নি, বরং সেটা ছিল সহাবস্থান। জাগতিক নিয়ম যেখানে একজনই অপর একজনকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হতে পারে, তাহলে দ্রৌপদীর ক্ষেত্রে সেটা ব্যাতিক্রম হবে কেন বা সেইহেতু স্বর্গ প্রবেশের ক্ষেত্রে সেটাই তার মৃত্যুর কারণ হওয়াটাকে দুর্ব্বল যুক্তি মনে না হবার কোনো কারণ নেই।
********************************
কৌতূহল

- কলঙ্ক মুক্ত কেউই ছিলেন না, শুধু নিত্তির ওজনে পরিমাপের তারতম্যই বোধ হয় যুধিষ্ঠিরকে ধর্মপুত্র বলা হতো। কিংবা মহাকাব্যের হয়তো বাধ্যবাধকতা ছিল একজনকে ধর্মের বাহক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার। সে ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি অধর্মের কাজ করার পর, ধর্মের কাছাকাছি থাকার মাপকাঠিতে কবি যুধিষ্ঠিরকেই নির্বাচিত করেছিলেন। ধর্মের প্রতি যথেষ্ট অনুরাগী হওয়া সত্ত্বেও পাশা খেলায় দ্রৌপদীকে বাজি রাখা বা যুদ্ধ ক্ষেত্রে আচার্যকে অসত্য ভাষণ দেওয়ার মাধ্যমে তার ধর্মের প্রতি আন্তরিকতাকে বেশ খানিকটা ম্লান করে দিয়েছিলো। কিন্তু কোন এক অজানা কারণে কোন কমিটির সুপারিশে তিনি ধর্মরাজের শিরোপা পেলেন , তা নিয়ে পাঠকের কৌতূহল থাকাটা ভীষণ স্বাভাবিক।
********************************
কোন ঋণটা বড়ো মানুষত্বের না অন্নের -

যদি অন্নের ঋণ বড়ো হয়ে থাকে তবে বিভীষণ বিশ্বাসঘাতক আবার অপরের স্ত্রীকে বলপূর্বক হরণ করে যে মানবতা বিরোধী কাজ রাবন করেছিল, তার বিরোধিতা করাটা অবশ্যিই মানুষত্বের কাজ। সেই গৌরবে বিভীষণ গৌরবান্বিত এবং সে অন্নের মায়াকে বর্জন করে চিরন্তন নৈতিকতাকে আলিঙ্গন করেছেন।
********************************
 ব্লগার -রবীন মজুমদার 

তারিখ - ১৫/০৬/২৪

 https://rabinujaan.blogspot.com ক্লিক করে যে কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে অন্যান্য ব্লগগুলি পড়া যাবে

1 টি মন্তব্য:

Sabita বলেছেন...

অসাধারণ

ujaan

(২৩৯)বহতি হাওয়া

(২৩৯)বহতি হাওয়া   "আধুনিক " এই শব্দটিকে নিয়ে বেশ বাগবিতণ্ডা হয় মাঝে মাঝে, কোন বাক্যের প্রিফিক্স হিসাবে তাকে  বসানো যায়। আধুনিকতাকে...