পোস্টগুলি

অক্টোবর, ২০২৫ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

৩৫৮ নব আঙ্গিকে মহাভারত ( ১ম পর্ব )

ছবি
  ৩৫৮ নব আঙ্গিকে মহাভারত  ( ১ম পর্ব )   ইন্দ্রপুরী-  একটা কাল্পনিক শহর। ভারতবর্ষের সবার নজর এই শহরের দিকে। প্রায় সমস্ত কর্পোরেট সাম্রাজ্যে র হেড অফিস, মিডিয়া হাউস, রাজনৈতিক দল গুলির  হেড কোয়ার্টার, ডিজিটাল যুদ্ধ, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা -সবাইকে নিয়ে এক নতুন কুরুক্ষেত্রের সম্ভাবনা গড়ে উঠছে। যাঁরা এখানে প্রধান প্রধান চরিত্রে আছে তাঁরা যথাক্রমে -  অর্জুন -একজন সাইবার  নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ , সোশ্যাল মিডিয়ার বহু চর্চিত একটি নাম, সত্যের প্রতি গভীর অনুরাগ, তার আদর্শ আর কর্মক্ষেত্রের ফারাকে নিয়মিত মানসিক দ্বন্দ্বে আক্রান্ত।   দ্রৌপদী সেন - একজন সাংবাদিক এবং একই সঙ্গে নারীবাদী, সত্যকে সর্বসমক্ষে তুলে ধরাই তাঁর জীবনের একমাত্র ব্রত, তাই বহুবার জীবনসংশয় উপস্থিত হলেও বুদ্ধিমত্তার জোরে বেঁচে গেছেন।  কৃষ্ণ আইয়ার - সে নিজে একজন রক্তমাংসের মানুষ নয়। বিলকুল এক এ আই  প্রোগ্রাম। সে শুধু মানুষের চেতনার দরজায় আলো জ্বালায়। সে নব কলেবরে গীতার এক মঞ্চ।  দুর্যোধন শাহ - একাধারে  করপোর্ট টাইফুন এবং রাজনীতিবিদ। ভীষণ অহংকারী এবং  আত্মবিশ্বাসী, সেটাই তার...

৩৫৭ যে কুরুক্ষেত্র কখনই থামেনা

ছবি
 ৩৫৭ যে কুরুক্ষেত্র কখনই থামেনা  শব্দের বার্তা  ভারতীয় দর্শন বলছে শরীর একটি জড় বস্তু। জ্বালানি ছাড়া যেমন ইঞ্জিন চলেনা, ঠিক তেমনি চৈতন্য ছাড়া শরীর অচল। কি অদ্ভুত তার গঠন, আর পরস্পরের সাথে  তাদের কি নিবিড় সম্পর্ক এবং ভাব ভালোবাসা। হৃদয় নামক মেশিনটি রক্ত নামক এক উচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে সর ইন্দ্রিয়কে জড়িয়ে রেখেছে।  মস্তিক শরীরের রাজ্যে রাজার মতো সিদ্ধান্ত নেবার অধিকারী যে সব সংবাদ তার সহকারীদের থেকে সংগ্রহ করে ; যেমন, চোখের পাতা খুললেই ছবির ছড়াছড়ি; জিভের তো কোন কথাই নেই, মতামতের জন্য সে সদাই ব্যাকুল; কান যেন সর্বদাই গোয়েন্দার মতো, বাইরে থেকে কিছু পেলেই সে কালবিলম্ব না করে দেহের রাজার কাছে পাঠিয়ে দেয়, ত্বকের তো জবাব নেই স্পর্শ পেলেই সে চিহ্নিত করার জন্য রাজার কাছে পাঠিয়ে দেয়। বাকি রয়ে গেলো মন। যেহেতু হৃদয়ের তন্ত্রীতে প্রবাহিত রক্তের সাথে সে সম্পর্ক যুক্ত নয়, তাই তার কথা কেউ শুনতে পারে না।   অরূপ মুখার্জি সেই শব্দটাই শুনে ফেলেছিল।  কেউ তাকে ফোন করেনি, কেউ চিঠিও লেখেনি।  তবু কে যেন একদিন বলল,  “তুমি কি জানো, তোমার ভিতরে আমি থাক...

৩৫৬ আলো-আঁধারি

ছবি
৩৫৬  আলো-আঁধারি    ছায়ার ভিতর আলো সকালের শহরটা তখনো পুরোপুরি জেগে ওঠেনি। পুকুরের জলে কুয়াশা গলে পড়ছে, দূরে হালকা ভেজা মাটির গন্ধ।  অমৃতা টেবিলের উপর রাখা নোটখানার পাতাগুলো গুছিয়ে নিচ্ছে। আজ তার বক্তৃতা — “মনুস্মৃতি ও আধুনিক সমাজে নারী।” তার স্বামী প্রভাত তখনো খবরের কাগজে চোখ গুঁজে বসে আছে।  চা ঠান্ডা হয়ে গেছে অনেকক্ষণ আগে।  “এসব নারীবাদী বিষয় নিয়ে এত মাথা ঘামাও কেন?” — প্রভাতের কণ্ঠে বিরক্তি। “কারণ আমি দেখি, এখনো মেয়েদের চোখে ভয় থাকে, স্বাধীনতার নাম শুনলেই ওরা পাশ কাটিয়ে যায়,” অমৃতার শান্ত উত্তর। প্রভাত হেসে উঠল ঠান্ডা স্বরে,  “মনু বলেছিলেন, নারীকে রক্ষা করতে হয়। এটাই যুগ যুগ ধরে চলে আসা সনাতন ধর্ম। স্বাধীনতা মানে বেহিসেবি জীবন নয়।” অমৃতা কিছু বলল না।  এই “রক্ষা” শব্দটাই তার ভেতরে অদ্ভুত একটা ধ্বনি তোলে—যেন নরম অন্ধকারে  বন্দি ক্রীতদাসীদের একদল পুরুষ নিজেদের স্বার্থে হাত বাড়িয়ে মুক্ত হওয়া খাওয়াতে নিয়ে যাচ্ছে।  বক্তৃতা হলে ছাত্রছাত্রীরা ভিড় করছে। কাবেরী—একজন নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়ে, সামনে সারিতে চোখে মুখে অনন্ত জিজ্ঞাসা ভরা দৃষ...

৩৫৫ কাঁচের ঘরের মৃত প্রজাপতি

ছবি
 ৩৫৫   কাঁচের ঘরের মৃত প্রজাপতি  জীবনের সার্থকতার একমাত্র  মাপকাঠি হচ্ছে তুমি কতখানি স্থায়ী এবং অস্থায়ী সম্পদ  সঞ্চয় করতে পেরেছো তোমার আগামী প্রজন্মের জন্য আর কতখানি চাকচিক্য উপস্থাপন করতে পেরেছো বাইরে তার উপর। বিকাশের অভিমুখ তখনই অবক্ষয়ের হাত ধরে হয়ে পরে বাহ্যিক। এই বাহ্যিক উন্নতির ভিড়ে ভারতবর্ষের চিরন্তন সংকৃতি আর সেই আত্মজ্ঞানের উন্মেষ  আজ ব্যাহত। তার ফলে,  গোটা সমাজ ও রাষ্ট্র ভীষণ যান্ত্রিক হয়ে উঠছে।  আধুনিক সভ্যতার ক্রমবিকাশের ইতিহাসের পাতায়  যদি আমরা চোখ বুলাই, তবে দেখা যাবে —মানবজাতি বাহ্যিক উন্নতির নেশায় যতই বুঁদ হয়ে উঠেছে, অন্তরের চিরন্তন সুরটা  ততই বেসুরো হয়ে বাজতে শুরু করেছে।   প্রযুক্তির ঝলকানির  হুঙ্কারে আত্মা হৃদয় থেকে ঘর ছাড়া হয়ে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।     বেসুরো সুরের প্রতীকী তাৎপর্য  একটানা কোলাহলে স্নায়ু আজ শ্রান্ত, চারিদিকে অবিশ্বাসের বাতাবরণ, যত্রতত্র ইঁদুর দৌড়ের প্রতিযোগিতা সেখানে একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে সম্পত্তির প্রতিপত্তিকে উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া।  সেই যে লর্ড ম্যাকলে সাহেব ...

৩৫৩ কেন আজ স্বামীজিকে নিয়ে চর্চা করার প্রয়োজনীয়তা আছে - (১০)

ছবি
৩৫৩  কেন আজ স্বামীজিকে নিয়ে  চর্চা করার প্রয়োজনীয়তা আছে - (১০ ) যদি একমত হন, তবে বেশী করে সবার কাছে শেয়ার করু ন  স্বামীজীর পত্রাবলী থেকে উদ্ধৃত  ২৯শে সেপ্টেম্বর, ১৮৮৪ স্বামীজিকে সন্যাসী অপেক্ষা অধিকতর বিপ্লবী হিসাবে ভারতবর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনের অক্লান্ত এক সৈনিক  হিসাবে বর্ণনা করার যথেষ্ট কারণ আছে। যতই তার রচনার মধ্যে তাঁকে খুঁজতে যাবো, ততই সেই ভান্ডার একে  একে  উন্মোচিত হবে সেই সব ভাবনার সূত্র।  জনগণকে অন্ধকারে রেখে বিপ্লব কোনকালে  সার্থকতা লাভ করেনি  -  আজকাল শিল্পক্ষেত্রে বহুল প্রচলিত শব্দ হচ্ছে 'স্টেটাস রিপোর্ট' বা কাজের অগ্রগতির মানচিত্র তৈরী করা হয়, সেখানে 'টার্গেটের' সাথে কৃতকর্মের মূল্যায়ন খুব সহজেই নির্ণয় করে তার ভিত্তিতে পরবর্তী দিশা নির্ধারণ করা সহজ হয়ে যায়। এই কাজে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার  হচ্ছে সঠিক ' তথ্য ' সংগ্ৰহ।  তাই স্বামীজিকে দেখি, তিনি পৃথিবীর যে প্রান্তে থাকুন না কেন , অনন্তের দিশারী স্বামীজী একই চিত্রপটে সারা ভারতের অগ্রগতি ও অধোগতির মানচিত্রটাকে দেশ থেকে সংগৃহিত  সংবাদের ভিত্তিতে আধুনিকীক...

৩৫২ একঘর জানালা ও দৃশ্যভ্রম

ছবি
৩৫২    একঘর জানালা ও দৃশ্যভ্রম  অরুণ দক্ষিণের জানলা দিয়ে আকাশের দিকে তাকালো , বেশ ঘননীল অম্বর। যেহেতু মাসটা ছিল আষাঢ়ের মাঝামাঝি তাই  উত্তরের জানলা দিয়ে উঁকি মারলো অরুণ, আকাশটা কখন যে নীল থেকে বেশ কালো হয়ে উঠেছে বুঝতেই পারেনি। দূর ! এতো ভাবছে কেন-  মেঘরা তো আকাশের অতিথি, ওই যে হরিবাবুর কারখানার ধুয়াগুলি একবার সেই পাইপ দিয়ে বেরোতে পারলে হু হু করে আকাশ পানে দৌড়োতে থাকে, ওঁরা হয়তো জানে ঐ উপরের যে আকাশটা আছে সে তার হৃদয়ে সবাইকে স্থান দেয়। আবার আরেক অতিথির বাড়ি ফেরার তাড়ায় কি অদ্ভুত একটা রক্তাভ আলোর বিকিরণ ছড়িয়ে যায়, তার পরে ধীরে ধীরে  অন্ধকার ঘনিয়ে আসে। আসলে আকাশ কি বদলায় ? না ! ওই যে কিছু স্বল্পমেয়াদি পার্থিব কিছু বস্তুর আনাগোনায় আমাদের দৃষ্টিকে সাময়িকভাবে আচ্ছন্ন করে রাখে। যার কোন স্থিতি নেই,  ক্ষনে ক্ষনে যে পরিবর্তনশীল, তাই তো সে মায়াময়। তাদের রূপ দেখে আকাশকে ভুল বোধ হয়। যে জানালা দিয়ে দেখি না কেন আকাশ, আকাশই থাকে। আসলে, আকাশ অখন্ড, সে ঈশ্বরের সাথে একমাত্র তুলনীয়।  অরুণ ভাবে, মানব ইতিহাসও যেন এই  জানালাগুলির কাহিনীর মতো। কেউ বা তার জানালা খুলছে...

৩৫১ সীমার মাঝে অসীম: রবীন্দ্র-ভাবনা ও রামকৃষ্ণের কালিতত্ত্ব

ছবি
৩৫১  সীমার মাঝে অসীম: রবীন্দ্র-ভাবনা ও রামকৃষ্ণের কালিতত্ত্ব    সত্য-মিথ্যা চিরকাল একসাথে বাস করে, উপলদ্ধি নাহলে তার থেকে  সত্যকে আলাদা করে চেনা যায় না। যে গভীর আত্মজ্ঞান থেকে মহাপুরুষরা একটু একটু করে মিথ্যার থেকে সত্যকে আলাদা করে আমাদের জ্ঞাতার্থে যে নৈবিদ্য উৎসর্গ  করছেন, সেটি পান করে আমরা তাদের উপলদ্ধির সাথে সহমত হয়ে আত্মপ্রসাদ লাভ করি। অনন্তকাল ধরে মানুষ সৃষ্টির রহস্য জানতে আগ্রহী। আজ পৃথিবীর নামি দামি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই জানা-অজানার তথ্য উদ্ঘাটনের উপর গবেষণা অব্যাহত আছে।  সীমিত পরিধির মধ্যে কতটা উপলদ্ধি করতে পারলাম আর কতখানি বাকি রয়ে গেল, সেই সম্পর্কে একটি অত্যন্ত ক্ষুদ্র ধারণার নেপথ্যে যাঁদের একনিষ্ঠ সাধনা আছে, সেই সম্পর্কে অবগত হই।  “সীমার মাঝে অসীম তুমি বাজাও আপন সুর”  — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই পঙক্তিটি আমাদের অস্তিত্ব ও চেতনার এমন এক গভীর সত্য উন্মোচন করে, যেখানে সীমিত জগতের প্রতিটি রূপে লুকিয়ে থাকে অসীমের প্রতিধ্বনি। জগৎ যেন এক বাঁধা বীণা, আর অসীম সত্তা তার তারে তারে সুর তোলে। প্রশ্ন জাগে — এই জগৎ কি সীমিত না অসীম? মানুষের জ্ঞান কতদূর প্রসা...

৩৫০ ঋগ্বেদের স্মৃতি ও আধুনিক প্রেমের প্রতিবিম্ব

৩৫০    ঋগ্বেদের স্মৃতি ও আধুনিক প্রেমের প্রতিবিম্ব ঋগ্বেদ, তুমি  ভাষার প্রথম ধ্বনি, যেখান থেকে মানবচেতনার সূর্যোদয় ঘটেছিলো। আজকের যুগ  তোমার কাছে প্রশ্ন রাখে—সেদিন কী এমন লিখেছিলে, যার প্রতিধ্বনি আজও শত পরিবর্তনের মধ্যে অমলিন ? তুমি বলেছিলে—যেমন এক ভক্ত ঈশ্বরের আকর্ষণে ধেয়ে যায় তাঁর পদতলে, তেমনই এক পুরুষ তার প্রিয়ার প্রেমে  উন্মত্ত হয়ে তাকে লাভ করতে উন্মাদের মতো তার পশ্চাতে ধাবমান হয়। এই উপমা যুগে যুগে অনন্ত সত্যের মতো রয়ে গেছে। শুধু কি তাই,  প্রেমিকের গোপন অভিসারে গুপ্ত প্রেমিকাকে শিকার করার জন্য প্রতিরোধহীন, প্রতিবাদহীন এক উপযুক্ত পরিবেশের জন্য কতনা শ্লোক ব্যয় করেছো তা পড়তে এখনো শরম লাগে।  সব নদী তো বাঁধের কাছে আত্মসমর্পন করে ;  কিন্তু কিছু নদী আছে, যারা প্রতিবন্ধকতার পরোয়া করে না— তারা জানে, তাদের পথ চলাতেই আনন্দ। প্রেমও ঠিক তেমনই এক নদী—যেখানে ব্যাকরণ, বিধি, সমাজের গণ্ডি কোনও কিছুরই বালাই নেই। প্রেম একবার এসে গেলে, সে মানুষের সমস্ত অভ্যন্তরীণ পরিমণ্ডলকে করায়ত্ব  করে ফেলে—যেন হৃদয়ের তন্ত্রীতে  নতুন জোয়ারের আবির্ভাব হয়। তখন প্র...