পোস্টগুলি

ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

(২৫০) যোগী থেকে ভোগী

  (২৫০) যোগী থেকে  ভোগী  উপঢৌকন দেবার মাধ্যমে স্বার্থ হাসিলের প্রথা পুরাণের যুগেও বেশ প্রচলিত ছিল। প্রসঙ্গক্রমে,  তারকাসুর সে সময়ে এমন দাপট দেখাচ্ছিল যাঁর রেশে তিনলোকের প্রতিনিধিরা দেবরাজ ইন্দ্রের নেতৃত্বে এর বিহিত করার জন্য ব্রহ্মা সমীপে এসে উপস্থিত হলেন। বলা বাহুল্য, ব্রহ্মাও এই সুযোগটির অপেক্ষায় ছিলেন। আজ তাঁর মনোস্কামনা পূর্ণ হতে চলেছে। আজ তিনি তাঁর সঙ্গে পেলেন স্বর্গের সকল দেবতা আর মর্ত্যের  মানুষের প্রত্যক্ষ মদত।  এবার নিশ্চয়ই দেবাদিদেব মহাদেবের অবিবাহিত তকমা ঘুচাতে তিনি সক্ষম হবেন। তিনি তো আসলে সৃষ্টিকর্তা। তিনি জানতেন, শিব তার সৃষ্টি প্রক্রিয়ায় কিছুতেই সাড়া দিচ্ছেন না। তাই তিনি তারকাসুরকে ব্যবহার করে একাধারে ক্ৰমবৰ্ধমান দেবতা ও মানুষের মধ্যে অনৈক্যকে দূর করতে সচেষ্ট হলেন আর অন্যদিকে তাঁর দীর্ঘদিনের উদ্দেশ্যকে সফল করতে প্রয়াসী হলেন। যুদ্ধক্ষেত্র এমনি একটি জায়গা যেখানে পাশাপাশি সংগ্রাম করতে করতে জাতপাত,বর্ণ ইত্যাদির  বিভেদ থাকেনা।  দেবরাজ ইন্দ্র ও অন্যান্য দেবতাদের আগমনের সময়  তিনি ধ্যানে বসে ছিলেন।  বেশ কিছুক্ষন বাদে উঠে এসে বললেন...

(২৪৯) দুই বিঘা জমির নতুন ঊপেন -

  (২৪৯) দুই বিঘা জমির নতুন ঊপেন -   ঝিকে মেরে বৌকে শিক্ষাদান একটা পুরানো প্রবাদ, কিন্তু ভীষণ চালু এবং অর্থবহ।  অধুনা বেশ কিছু ভারতীয়কে লঘু পাপে গুরুদণ্ড দিয়ে বড় জমিদারবাবু তার চৌহদ্দিতে কাজ করে পেট চালানোর অপরাধে ছোট জমিদারের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। আসলে ছোট জমিদারবাবু যদি খাওয়াপরা দিতে সক্ষম হতেন তাহলে তো সাত সমুদ্র তেরো নদীর পারে গিয়ে বড়ো জমিদারের পদসেবা করতে হতনা। আরো বড়ো আঘাত অপেক্ষা করছিলো ছোট জমিদারের জন্য, যখন  তার  আদরের দুধেল গাইকে অন্যের জমিতে অনধিকার প্রবেশের অপরাধে  পেঁয়াদা  কাচারী নিয়ে তাকে যখন উপস্থিত করলেন।   আসলে বড়ো জমিদার ছোট জমিদারকে একটু ঘুরপথে শিক্ষা দিতে চেয়েছেন।  ছোট জমিদারের খাস তালুকে তাদের পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই বড় জমিদার  ছোটবাবুকে তার দরবারে  ডেকে নিয়ে এলেন। সময় নষ্ট না করে সোজাসুজি বললেন , বাপু আমার জমিদারিটার উপর নজর দিতে হবে আজ থেকে। আমার পূর্ব পুরুষেরা কি করেছিল জানিনা, তবে তোমার ওখানে আমার জমির উৎপাদিত উদ্বৃত্ত ফসল বেচার জায়গা করে দিয়ে হবে আর সেখানে ফসলের উপর খাজনা কি হবে সেটা আমি ঠিক করবো।   ...

(২৪৮) আমি মহাভারতের সত্যবতী -

ছবি
 (২৪৮)  আমি মহাভারতের সত্যবতী - একে একে পাড়িরা সবাই চলে গেছে ঘর পানে । জনমানবশূন্য ঘাটে একাকী এক  কুমারী অনেকক্ষন ধরে নৌকার গলুইয়ের প্রান্তে উপবেশন করে আছে। আকাশের রক্তিম পরশ ঘোষণা করছে সন্ধ্যা আগত প্রায়। যমুনা দিয়ে বয়ে যাওয়া  জল  কখন যেন তার রং নীল থেকে  আরো ঘন নীলাকার হয়ে উঠেছে। উর্ধাকাশে উড়ে যাওয়া ঘরমুখী পাখিদের সঙ্গবদ্ধ ডানা সঞ্চালন যেন নদীর ঢেউয়ের উঠানামার সাথে তাল মিলিয়ে  এক অপরূপ সুরের মূর্ছনার সৃষ্টি করেছে। তাঁর দৃষ্টিতে রয়েছে  একরাশ শূন্যতা, সে যেন আকাশের মেঘের সাথে সখ্যতা করে  অসীমের পানে  ধেয়ে যাচ্ছে।   কবে কোন প্রত্যুষে জীবিকার তাগিদে   হাতে বৈঠা তুলে নিয়ে নিত্যদিনের  যাত্রীদের পারাপারের  দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিল। সেই কাজের অবসরে কখন যেন জীবন থেকে কৈশোর চলে গিয়ে যৌবন  দ্বারে এসে কড়া নেড়েছে, এখনও  সে তা  মনে করতে পারেনা। আজ পাড়ে বসে আর যাত্রীর জন্য অপেক্ষা নয়, আজ তাঁর নারী জীবনের পূর্ণতার প্রতীক্ষা।      দেখতে দেখতে যমুনা নদীর ছোট কখনো বা বড় ঢেউরা একে একে পরস্...

(২৪৭) মহাভারতের অন্দরে ও বাহিরে - দ্বিতীয় পর্ব

ছবি
   (২৪৭)   মহাভারতের অন্দরে   ও বাহিরে     - দ্বিতীয়  পর্ব                                          মহাভারতের ঐতিহাসিক উপাদান     বেদব্যাসের ছোয়ায় মহাভারত, হরিবংশ ও পুরাণের সৃষ্টি। প্রায় ৫০০০ বছরের পুরানো গ্রন্থ বিশ্বের দরবারে বিদেশী পন্ডিতদের হাত ধরে অনেকটাই  পরিচিতি  লাভ করে।  এঁদের মধ্যে অনেকেই পাশ্চাত্য সভ্যতার একনিষ্ঠ সাধক অর্থাৎ তাদের সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে ভীষণ একপেশেভাবে গৌরবান্বিত।  ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতবর্ষ সম্পর্কে কৌতূহলবসত  তাদের সংস্কৃত ভাষাকে আয়ত্ত্ব করার অভ্যাস। এটাই তাদের কাল হল।  তাঁদের অহংকারকে প্রায় গুড়িয়ে দিতে উদ্যত হলো  ভারতীয় প্রাচীন সংগ্রহের উর্ব্বরতা। এর মধ্যে মহাভারত অন্যতম। বিদেশী বেশ কিছু পন্ডিতদের কাজ হলো এই সমৃদ্ধশালী গ্রন্থগুলির কৌমার্য্য হরণ করা। উদ্দেশ্য একটাই এই ব্রিটিশ পদানত জাতিটার সাংস্কৃতিক আভিজাত্যকে কলুষিত করা। তার জানতো মিথ্...

(২৪৬) মহাভারতের অন্দরে ও বাহিরে - প্রথম পর্ব

ছবি
 (২৪৬)   মহাভারতের অন্দরে   ও বাহিরে    - প্রথম পর্ব                                      মহাভারতের অতল  জলরাশি  মহাভারত আসলে যেন অতলান্তিক সমুদ্রের বিস্তীর্ন জলরাশি, কত যে প্রাণী সেখানে বাস করে তার ইয়ত্তা নেই। তাদের মধ্যে কেউ বা সহিংস  আবার  কেউ বা অহিংস কিন্তু সবারই আশ্রয়স্থল সেই সমুদ্র। যেখানে ছোট  বড় বহু নাম না জানা নদীর শেষ গন্তব্যস্থল সেই মহাসাগরে।   এক একটা নদীর এক এক ধরনের চরিত্র। কেউ ভীষণ খরস্রোতা, কেউ বা পাথরের বারংবার আঘাতে শেষের মাঝে তারা যে  অশেষ তাই তাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে কোন ভুল হয়নি।  জলের তোড়ে  ভেসে আসা অন্য কোন উপাদান মূল স্রোতের সাথে বারবার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিলিত হতে চায় সাগর তাকে জায়গা দেয় কিন্তু মিশতে দেয় না। কেননা তেলের সাথে জলের জন্ম জন্মান্তরের ব্যবধান। ব্রাহ্মণ্যবাদ বৌদ্ধের উদারতার কাছে পর্যদুস্ত হয়ে ক্ষয়িষ্ণু গৌরবকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য অতীব জনপ্রিয় মহাভারতের অন্দ...

(২৪৫ ) নারদের মর্ত্য ভ্রমণ -২০ তম অধ্যায়

ছবি
  ( ২৪৫ )   নারদের মর্ত্য ভ্রমণ -২০ তম  অধ্যায়  আগামী দিনে কি   এ  আই-কে শাসক   চাকুরী সংকোচনের ঢাল হিসাবে ব্যবহার করবে  ?   [ ইন্দ্রের রাজসভায় প্রত্যেক দিনের মতো এক একজন বক্তা একটি বিশেষ বিষয়ের নিয়ে কথা বলেন।    আজকের বিষয়---আগামী দিনে  এ  আই-কে শাসক    চাকুরী সংকোচনের ঢাল হিসাবে ব্যবহার করবে  ?    আলোচনায় মহর্ষি নারদ  ]  মঞ্চে উঠে  মহর্ষি নারদ   সব দেবতা এবং অন্যান্য উপস্থিত অতিথিদের প্রতি নমস্কার জানিয়ে তার বক্তব্যের শুরুতে এই বিষয়ের গুরত্ব সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করালেন। প্রত্যেক ব্যাবহারকারীদের  স্বাধীনতা আছে এ আই প্রযুক্তিকে  কি ভাবে ব্যবহার করবেন সেটা  তার দৃষ্টিভঙ্গির  উপর নির্ভরশীল।   ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুযায়ী ভারতবর্ষের সেক্টর ভিত্তিক চাকুরীর পরিসংখ্যান বলছে - কৃষি ক্ষেত্রে ৪৬.৭ %  , উৎপাদনের সাথে জড়িত ১১.৪ % , সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রিতে প্রায় ২৮.৯ % , এবং নির্মাণ শিল্পে ১৩ % । অবশ্যিই আমাদের নজর রাখতে হবে কি কি ধরন...

(২৪৪ ) নারদের মর্ত্য ভ্রমণ -১৯তম অধ্যায়

ছবি
 (২৪৪ )   নারদের মর্ত্য ভ্রমণ -১৯তম  অধ্যায়  এ  আই  কি নিম্নগামী কর্পোরেট সিস্টেমের বাঁচার শেষ অস্ত্র ? [ ইন্দ্রের রাজসভায় প্রত্যেক দিনের মতো এক একজন বক্তা একটি বিশেষ বিষয়ের নিয়ে কথা বলেন।   আজকের বিষয় -  আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সির( এ আই ) হাত ধরে কি সংকটে নিমজ্জিত (একচেটিয়া পুঁজি) কর্পোরেট সেক্টররা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে?   আলোচনায় শ্রী শ্রী গনেশ।  ] শ্রীগণেশ মঞ্চে উঠে উপস্থিত দেবতা ও মানুষের উদ্দেশ্যে অভিবাদন জানিয়ে  বলতে শুরু করলেন। এতো বড় বিষয়কে সীমিত সময়ের পরিসরে বলাটা আমার কাছে একটা চ্যালেঞ্জ।  এইটা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে , এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে  কারণ ছাড়া কোনো কার্য্য হয় না।  প্রথমতঃ কর্পোরেট সিস্টেমে সাধারণ মানুষের প্রতি কোন দায়বদ্ধতা প্রদর্শন করার ব্রত নিয়ে আবির্ভূত হয়নি।  দ্বিতীয়তঃ  গণতান্ত্রিক তথা  ধনতান্ত্রিক দেশগুলি তাদের   এমন কোন  বাধ্যবাধকতা নেই বা  দেশের সরকার তাদের প্রতি আরোপ করেনি, যাতে করে তাঁরা  সমগ্র দেশের গণমুখী আর্থিক পরিকাঠামোর অংশীদার হয়ে সামাজিক উন্নতি...

(২৪৩) নারদের মর্ত্যে ভ্রমণ - ১৮ তম অধ্যায়

ছবি
( ২৪৩) নারদের মর্ত্যে ভ্রমণ - ১৮ তম অধ্যায়    [ দেবরাজ ইন্দ্রের রাজসভায় বর্তমানে  বিশ্বনায়নের হাত ধরে বিদেশ থেকে কতনা মানুষের  নিত্যদিন  সমাগম  ঘটছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। অপর একটি কক্ষে রুটিনমাফিক বেশ ব্যস্ততার সাথে বিষয়বস্তু অনুযায়ী মর্ত্য থেকে সংগৃহিত  তথ্যের বিন্যাস হচ্ছে,  এবং তার পরে তাকে পাঠানো হচ্ছে সেই সংক্রান্ত বিভাগে। মূল সভা কক্ষে  বক্তাগণ যার যার নির্দ্দিষ্ট বিষয়ের উপর প্রাসঙ্গিক ভাষণ দিচ্ছেন। এক একজনের ভাষণ শেষে, নানাদিক থেকে ভিন্ন ভিন্ন মতামত ভেসে আসছে আর  এদের সবাইকে নিয়ে ভরপুর বৈচিত্রে ভরা "নারদের মর্ত্য ভ্রমণের" সাথে আমাদের আগামী দিনের পথ চলা শুরু হয়ে গেছে। এখানে একমাত্র নির্ভর যোগ্য  সংবাদ আহরণকারী এবং দেবতাদের প্রশ্নের  উত্তরদাতা সেই মহর্ষি নারদ মহাশয়। ] ভরা সভায় দেবরাজ ইন্দ্র মহর্ষি নারদকে উদ্দেশে বললেন, এইমাত্র দেবাদিদেব মহাদেব আমাকে তার গুটি কয়েক ভক্তের ফরমাশ ফরওয়ার্ড করে পাঠালেন , আপনি যদি সরজমিনে গিয়ে দেখে আসেন তা হলে ভালো হয়।  প্রতিনিয়ত এই রকম বহুবিধ কাজের ফরমায়েশ আসতে থাকায় ,মহর্ষি নারদ অবেশেষে...

(২৪২) নারীর একাল ও সেকাল

ছবি
 ( ২৪২) নারীর   একাল ও সেকাল  সেকেলে নারী  আদ্যিকালের   সমাজপতিদের মাথায় ঢুকে গিয়েছিলো পরিবার সম্প্রসারণের মাধ্যমে সমাজের তথা দেশের  বুনিয়াদ শক্ত হয়। শস্যের বীজ অধিক  উৎপাদনের মধ্যে যেমন খাদ্যের সুরক্ষাকে নিশ্চিত করা যায় ঠিক তেমনি প্রাচীন কালে  নারীর প্রজনন শক্তিকে মূলধন করে জনবল বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের সীমান্ত রক্ষা করে রাজনৈতিক সুরক্ষার  শ্রীবৃদ্ধি করা হতো।   প্রাচীন সাহিত্যে নারী  একদিন নারীকে সৌন্দর্য্য ও সমৃদ্ধির প্রতীক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে ' ব্রাহ্মণ' সাহিত্যে। একাধারে নৈসর্গিক ও অর্থনৈতিক পটভূমিতে নারীকে সমাজ দর্শন করেছে।  তাই দেখা যায় যজ্ঞের সময় যজমানের পত্নীর উপস্থিতি। আবার অন্যদিকে  সামন্ততান্ত্রিক সমাজে নারী পুরুষের দ্বারা পদদলিত হতেও দেখা যায়। বিবাহিত নারীকে উর্বর জমি ছাড়া বোধহয়  অন্যকিছু বলে ভাবা হতো না।  এই প্রসঙ্গে শতপথ ব্রাহ্মণে উল্লেখিত একটা বিধিকে উল্লেখ করা যেতে পারে [৫ : ২ : ৩,১৩ ] যেখানে পুত্রহীনা নারীকে ত্যাগ করার বিধান দেওয়া আছে। আবার  শতপথ ব্রাহ্মণের অন্তর্গত একটি দেবকাহিনী...