পোস্টগুলি

জুলাই, ২০২৫ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

৩০০ ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন - ২০ তম পর্ব

৩০০   ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন - ২০ তম    পর্ব   রামায়ণ ও কালিদাসের মেঘদূত  এবং পরবর্তী সময়   (১০)  যে প্রেম সীমাব্ধতাকে অতিক্রম করে, সে প্রেম বিমূর্ত প্রেম, সে অনন্তের পানে ধেয়ে যায়, তাকে সীমারেখা দিয়ে বাধা যায় না। আরেকটি প্রেম হচ্ছে  দেহকেন্দ্রিক( যাকে অন্যভাবে যৌনতা বলা যায়, আসলে সভ্য জগতে কেউ তো বলতে পারেনা, "আমি  যৌন আকাঙ্খায় পীড়িত", বরং বলে প্রেমানন্দের পিয়াসী) যার জন্ম দেহকে ঘিরে, যে ভোগকে ইঙ্গিত করে, সে প্রেম তৃষ্ণাকে আলিঙ্গন করে, ক্ষনে ক্ষনে সেই আকাঙ্খার তৃপ্তি না হলে ভাবের জগতে অপূর্ণতা অনুভূত  হয় আর সেই অনুভব থেকে জন্ম নেয় বিরহ।   দেশ-বিদেশের সাহিত্যে ব্যতিক্রমী প্রেমের বহু উদাহরণ আছে। যেমন, রবীন্দ্রনাথের কবিতার একটি লাইন এখানে ভীষণ প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়  - "পূর্ণিমায় দেহহীন চামেলীর লাবণ্য বিলাসে"- এক গভীর ভাবনা , যেখান থেকে স্পষ্ট উচ্চারিত হয় এক বিমূর্ত চিত্রের ধারণা যার সৌন্দর্য্য সময়কে অতিক্রম  করে অসীমের দিকে হাতছানি দেয়।  যুগযুগান্ত ধরে যে  চাঁদকে আমরা রোমান্টিক...
  ২৯৯  ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন -  ১৯ তম    পর্ব   রামায়ণ ও কালিদাসের মেঘদূত  এবং পরবর্তী সময়   (৯)  হিন্দুদের শাস্ত্রে মানুষের জীবনের প্রয়োজনীয় সব উপাদানের জন্য একজন দেবতাকে নির্দ্দিষ্ট  দায়িত্ব দেওয়া  হয়েছিল। তেমনি, ধন, সম্পত্তি, ও ঐশর্য্য সম্পর্কীয় যা কিছু আছে তার একমাত্র প্রতীকী দেবতা ছিল কুবের। যদি ধন সম্পত্তি লাভ করতে যাঁরা চাইতেন, তারা কুবেরের উপাসনা করতেন। ধন থাকলেই যে ঐশর্য্য থাকবে এমন কোন মানে নেই।   কুবের শব্দটির অর্থ হচ্ছে, যাকে দেখতে কুৎসিত। তাই যে ভাবে পা দেবার ব্যাপারে ব্রহ্মা কার্পণ্য করেন নি কিন্তু দাঁতের ব্যাপারে যথেষ্ট  কার্পণ্য করে মাত্র আটটা দাঁত দিয়েছিলেন সেখানে পা দিয়েছিলেন মাত্র তিনটি। মনে হয়, সেই যুগে ধনী আর নির্ধনের মধ্যে একটা সুক্ষ সীমারেখা ছিল। কেউ  কেউ হয়তো বলতে পারেন, তার চেহারাটা একটা রূপক মাত্র, আসলে কর্ম করে  যারা উপার্জন করেন আর অলসভাবে যারা অর্থ সম্পত্তির অধিকারী হন তারা  সুন্দর হতে পারেন না, এই দৃষ্টিভঙ্গির ফারাকটা কুবেরকে অসুন্দর হিসাবে চ...

২৯৮ ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন - ১৮ তম পর্ব

  ২৯৮  ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন -  ১৮ তম    পর্ব   রামায়ণ ও কালিদাসের মেঘদূত  এবং পরবর্তী সময়   (৮)   " একা কুম্ভ রক্ষা করে নকল বুঁদির গড় " কুবেরের বিশাল উদ্যান, চারিদিকে ফুল-ফলের সমারোহ কিন্তু ভীষণ কৃপণ কুবের একমাত্র যক্ষকে তার পাহারাদার করে রেখেছেন।  এটি যখন উদ্যান হিসাবে বর্ণিত হয়েছে, তাহলে মাঝে মাঝেই হাতির আগমন হয় কি ভাবে, নিশ্চয় প্রকৃতিসৃষ্ট অরণ্যের মায়া মানুষের তৈরি উদ্যান ত্যাগ করতে পারেন নি। ধরে নেওয়া যেতে পারে অরণ্যের সাথে এই উদ্যানের গভীর সংযোগ ছিল।  কবি কালিদাসের কাব্যের নায়ক, স্বভাবে শান্ত, প্রকৃতিতে  ইন্দ্রিয়বিলাসী, এই বিলাসিতাকে  হাতিয়ার করে কবি যৌনতাকে শিল্প পর্য্যায়ে নিয়ে গেছেন, তাই বহু সমালোচক "মেঘদূত" কাব্য সম্পর্কে বলেছেন, যৌনতাকে কাব্য থেকে সরিয়ে দিলে শুধু মাত্র একটা কঙ্কাল পরে থাকবে।  যক্ষের ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করে কেউ কেউ তাকে পিশাচ বলে অবিহিত করেছেন কিন্তু এখানে তিনি এক অবিসংবাদিত প্রেমিক।  একটা বাগানের রক্ষক থেকে প্রেমিক হিসাবে উন্নীত করা আবার তার প্রেমের...

২৯৭ ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন - ১৭ তম পর্ব

    ২৯৭  ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন -  ১৭ তম    পর্ব   রামায়ণ ও কালিদাসের মেঘদূত  এবং পরবর্তী সময়   (৭)   জীবন মানেই  নামা ওঠার খেলা। একবার বায়ুকে  গ্রহণ করো আবার তাকে ছেড়ে দাও। ঘুমের সাথে কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে আবার জেগে ওঠা, এটাই একটা ছন্দ।   এই চক্রটা  বন্ধ হলে তখন মনের মধ্যে শুধু পরে থাকবে অস্তিত্ব সম্পর্কের ধারণাটি; বিশ্ব অস্তিত্বের সাথে স্থুল শরীরটি মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে। জীবনে যদি উষ্ণতার আঁচ লাগে তখন অবশ্যিই ধরে নিতে হবে ঠিক তার পিছন পিছন  শীতলতা আসবেই। তখন উষ্ণতা অতীত আর শীতলতাই  বর্তমান। বাস্তবে কোন অবস্থাটাই শেষ কথা নয়। কোন আধিপত্যই চূড়ান্ত নয় এটাই বিশ্ব প্রকৃতির নিয়ম।  এখানেই একটা প্রশ্ন নাড়াচাড়া দিচ্ছে, সত্যিই আমরা জেগে উঠি, অর্থাৎ বাইরে পৃথিবীকে বোঝার চেষ্টা করি ? উত্তর আসবে করিনা। কেন করিনা, আসলে বুঝতে পারিনা কোনটাকে দেখা বলে আবার কাকে অনুভব বলে। যেমন, একটা কথা প্রচলিত আছে রাস্তার কোন মামুলি দুর্ঘটনা ঘটলে আহত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করলে বলে, দেখতে পাইনি  ত...

২৯৬ ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন - ১৬ তম পর্ব

  ২৯৬ ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন -  ১৬ তম    পর্ব   রামায়ণ ও কালিদাসের মেঘদূত  এবং পরবর্তী সময়   (৬)   সমাজ যত এগিয়ে যায় তখন পিছনে ফেলে যায় অতীতের মূল্যবোধকে , সেই শূন্য স্থানটি দখল করে নেয় কৃত্তিমতা। যারা একদিন বাল্মীকির কাব্যে গ্রাম, অরণ্য ও পাহাড়বাসী  ছিল,  কালিদাসের সময়  তারা শালবন কেটে জঙ্গলকে দূরে সরিয়ে রেখে  ধীরে ধীরে নগরবাসীতে পরিণত হলো। সহজ সরলভাবে বৃদ্ধি পাওয়া প্রকৃতি সৃষ্ট অরণ্য পরিণত হল মানুষের তৈরি মেকি অরণ্যে, যার নাম উদ্যান ও নগর।  বাল্মীকির বহু উপমায় যেমন বনের সিংহ, বাঘ, বিসাক্ত সাপ, হাতী ও হরিনের মেলা দেখি আর সেই বনে নিশ্চিন্তে রাম, লক্ষণ ও সীতা নির্ভয়ে নিদ্রা যাচ্ছে। আবার লঙ্কার বর্ণনায় দেখি হাজারো তরুর বনচ্ছায়ায় ঘেরা বাসভূমি। সে যুগের  মানুষেরা প্রতিনিয়ত হিংস্র জন্তুদের উপস্থিতিকে স্বীকার করে নিয়ে, একই সাথে তারা জীবনধারণ করতো।  এ  যেন ঋগ্বেদের অরণ্যের বর্ণনার অসমাপ্ত রেশকে টেনে নিয়ে এগিয়ে  যাচ্ছে।   কালিদাসের ভারতবর্ধ, আদিম জীবনের স্বাদ আল্হাদ...

২৯৫ ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন - ১৫ তম পর্ব

  ২৯৫ ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন -  ১৫ তম    পর্ব   রামায়ণ ও কালিদাসের মেঘদূত  এবং পরবর্তী সময়   (৫)   গত সংখ্যায়  যেখানে শেষ হয়ে ছিল বৃহত্তর  স্বার্থে শ্রী রামচন্দ্রের    ক্ষুদ্রতর  স্বার্থ বিসর্জনের মাধ্যমে এক  অনন্য রাজনৈতিক দৃষ্টান্ত স্থাপনের মধ্যে দিয়ে। আসলে, শ্রীরামচন্দ্রের পথ অনুসরণকারী বলে যারা দাবী করেন, তাদের দাবির সত্যতা তখনিই প্রতিষ্ঠিত হবে যখন  তারা  রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে বৃহত্তর মানুষের স্বার্থ রক্ষা করবেন।   আমরা বাস্তবে ঠিক তার উল্টো চিত্রটা  দেখতে পাই।  স্বঘোষিত রাম অনুরাগীরা কার্যক্ষেত্রে কতিপয় মানুষের স্বার্থ রক্ষা করার জন্য বৃহত্তর। অংশের স্বার্থকে ক্রমাগত জলাঞ্জলি দিয়ে যাচ্ছেন। ইতিহাস যেমন পথের দিশা দেখায়, কার্যের পিছনে পৌনঃপুনিক কারণের অনুসন্ধানও বর্তমানের গতিপ্রকৃতি এবং আগামীর সম্ভাবনাকে নির্দ্দেশ করে।  প্রশ্ন ক্রমাগত থাকবে যতক্ষন পর্যন্ত  সঠিক উত্তর না পাওয়া যায়।  "যুদ্ধে ও প্রেমে অন্যায় বলে কিছু হয় না" - এই ...

২৯৪ ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন - ১৪ তম পর্ব

  ২৯৪  ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন -  ১৪ তম    পর্ব   রামায়ণ ও কালিদাসের মেঘদূত  এবং পরবর্তী সময়   (৪)   একটা কাব্য কি করে ধীরে ধীরে জনজীবনের গল্প হয়ে যায়, কখন যেন  বাস্তবতার মাটিকে স্পর্শ করে তার অনন্য নজির রামায়ণে লক্ষ্য করা যায়।   ভাতৃপ্রেমে আপ্লুত লক্ষণ অবশ্যিই প্রশ্ন তুলতেই পারেন, কোন এক কালে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে গিয়ে পিতা দশরথ ও মাতা কৈকেয়ীর অমাতৃসুলভ আচরণের কারণে জৈষ্ঠ্য ভ্রাতার রাজ্য থেকে নির্বাসন। সেই যুগে সরাসরি  উত্তর না দিতে পারলে, নীতিবাক্যের গুদাম  থেকে কয়েকটি নীতি বাক্য তুলে এনে  প্রশ্নকর্তাকে প্রশমিত করার চেষ্টা করা হতো হত। ধর্মবীর শ্রীরামচন্দ্র সেরকম কিছু একটা বলে লক্ষণকে নিরস্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। ধর্মের দোহাই দেওয়াটা অবশ্য শাসকদের প্রশ্ন থেকে অব্যাহতি পাবার বিশাল অস্ত্র বললেও  অত্যুক্তি হয় না।   এই ধর্ম নামক শব্দটির আড়াল থেকে শর প্রয়োগের আঘাতে আজও সমাজে মানুষ যেমন  আক্রান্ত,  আবার  রামায়ণ, মহাভারত প্রভৃতি মহাকাব্যে বহু অনৈতি...

২৯৩ ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন - ১৩তম পর্ব

   ২৯৩  ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন -  ১৩তম    পর্ব   রামায়ণ ও কালিদাসের মেঘদূত  এবং পরবর্তী সময়   (৩)  রামায়ণ সেই যুগের সংস্কৃত সাহিত্যের এক অনন্য মহাকাব্য।  মহাকবি বাল্মীকি তার শ্লোকগুলি রচনার ক্ষেত্রে প্রভাবিত হয়েছিলেন  এক ব্যাধের তীরের আঘাতে  সঙ্গমরত এক ক্ৰৌঞ্চির  মৃতদেহের পাশে স্ত্রী ক্ৰৌঞ্চির তীব্র ক্রন্দনের হৃদস্পর্শী হাহাকারের মধ্যে দিয়ে, যা মহাকবির অন্তরকে স্পর্শ করেছিল। এই শোকই শ্লোক সৃষ্টির আদি পুরুষ।  আদিকাল থেকে ভারতীয়রা ছিল ধর্মপ্রাণ জাতি। যত রকমের সাহিত্য সে যুগে সৃষ্টি হয়েছিল, তার মধ্যে ধর্ম প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যটাই  ছিল অন্যতম প্রধান উপাদান। তাই পুরাণের মতো ইতিবৃত্তকে শুধুমাত্র সংরক্ষনের কারণে ধর্মপুস্তক বলে চিহ্নিত করা হয়ে ছিল, তাই আজও সে সংরক্ষিত আছে। কারণ সেদিনের পুরানকাররা জানতেন, যদি ধর্মপুস্তকের তকমা সেটে দেওয়া যায় তবে ভারতবাসী সেটা বুকে আগলে বাঁচিয়ে রাখবেন। মহাকবি বাল্মীকি কিন্তু শুধুমাত্র ধর্মের মতো গুরুতর প্রসঙ্গ তুলে আমাদের ভারাক্রান্ত করেন নি। কাহিনীর গতি য...

২৯২ ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন - দ্বাদশ পর্ব

   ২৯২  ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন -  দ্বাদশ   পর্ব   রামায়ণ ও কালিদাসের মেঘদূত (২)  কালিদাসের মেঘদূত, বাল্মিকীর রামায়ন, ঋগ্বেদ ও রবীন্দ্রনাথ  এই সবের মধ্যে একটা সাধারণ যোগ সূত্র হচ্ছে প্রকৃতি। প্রকৃতির সাথে মেলামেশা মানেই হচ্ছে এক বাঁধন ছেঁড়া গান। বৃষ্টির মধ্যে যেমন বিরহ আছে, তার পাশাপাশি সৃষ্টিও আছে। সৃষ্টির সাথে যৌনতার মাদকতা অবশ্যিই আছে, তা না হলে সৃষ্টি কোন দিন পূর্নতা পেতো না।  মেঘের গোটা জীবনের  তিল তিল করে জমিয়ে রাখা জলরাশি সৃষ্টির আহবানে মর্তের পৃথিবীতে  বৃষ্টি হয়ে  নেমে এসে  নিজের জীবনের অহংকারকে প্রকাশ করে।  বৃষ্টির ফোঁটায় ফোঁটায় প্রকৃতির সৃষ্ট জীবের শুষ্ক হৃদয়ে বেজে ওঠে স্বপ্নের প্রেমিকার উজ্জ্বল উপস্থিতি, তারপর একে একে হারিয়ে যায় আগামীকে আহবান করতে।  তাই বরিষণ শেষে গাছে গাছে অঙ্কুরিত হয় ছোট ছোট মুকুল। যারা সূর্য্যপানে মুখ তুলে জীবনের প্রত্যাশা প্রার্থনা করে।  এইভাবেই প্রকৃতি তার ভাঙ্গাগড়ার খেলা যুগযুগান্ত ধরে চালিয়ে যায়।  জীবন-মৃত্যুর এই রহস্য সৃষ্টির শুরু থেকে কিছু কি...

২৯১ ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন - একাদশ পর্ব

  ২৯১  ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন -  একাদশ   পর্ব   রামায়ণ ও কালিদাসের মেঘদূত (১) ইতিহাস এগিয়ে চলে  প্রাচীনকে কাছে টেনে নিয়ে তাকে বর্তমানের  মতো গড়েপিঠে  তোলার মধ্যে। এতে  অতীতের কোন  অবমাননা হয় না , বরং সেটাই তার ন্যায্য অধিকার এবং ইতিহাস সেই  ধারাই বহন করে আসছে। বর্তমানের যদি সংজ্ঞা দিতে হয়, তাহলে বলতে হয়, রাশি রাশি জড় করে থাকা অতীতের আত্মবিসর্জনের মধ্যে যে হোমশিখা জাগ্রত হয়, সেখান থেকেই উঁকি মারে বর্তমানের সোনালি আভা। এই ভাবেই গত হয় পূর্বের কাল বর্তমান কালের গহ্বরে। এই নবীন প্রবীনের আত্মসমর্পনের পালা নিরবিচ্ছিন্ন গতিতে ভবিষ্যতের পানে ধেয়ে যাচ্ছে।  যে সাহিত্যের বীজ একদিন প্রোথিত হয়েছিল ঋগ্বেদের বাগানে, সে একদিন স্বাদে, গন্ধে বিকশিত হয়েছিল। যুগান্তে তাদেরই আত্মবিসর্জনে নবপল্লবে উৎসারিত হয়েছিল ঋষি বাল্মীকির অন্তঃপুরে। তারপর বাল্মীকির বাগানের সেই বীজ অমর অঙ্কুরে প্রস্ফুটিত হয়েছিল কালিদাসের অন্তরস্থ  বাগানে ফুলে ফলে।  এখানেই শেষ হয়নি কালের যাত্রা, এর মধ্যে কত  নাম না জানা বাহক হয়তো ছিল কিন্তু ...

২৯০ ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন -দশম পর্ব

 ২৯০ ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন -দশম   পর্ব   ঋগ্বেদ ও রামায়ণ  রামায়নের সাথে কালিদাসের মেঘদূতের সম্পর্ক স্থাপনের আগে একটু পিছিয়ে যেতে হবে। খুঁজতে হবে মানবের সেই চিরন্তন বৈশিষ্টকে যে কালের নির্দ্দিষ্ট ধারাকে বহন করে বর্তমানে পৌঁছেও  তার কোন পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়নি। সেই আদি অকৃত্তিম প্রকৃতির প্রতি মানুষের আত্মীয়তার বন্ধন আজও মানব হৃদয়ে অমলিন।  ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলের ১৪৬ সূক্ততে ঋষি তার আবেগকে কি গভীর অনুভূতির সাথে ব্যক্ত করেছেন - গহন, গভীর, ঘন, সুনিস্তব্ধ অয়ি অরণ্যানী ! তোমার প্রত্যন্ত সীমা কতদূরে কিছুই না জানি।  আপন বিস্তৃতিমাঝে আপনারে হারিয়েছ যেন  খুঁজে আর নাহি পাও !  পান্থজনে শুধাও না কেন  গ্রামের পথের বার্তা ? এ নির্জনে একাকিনী থাকি  কখনও  হৃদয়ে তবে সশঙ্কিত ভয় জাগে নাকি  নিতান্ত নিরালা বোধে ? শ্বাপদ গর্জন করে যবে  মনে হয় বৃষগন ডাকিছে গম্ভীর হাম্বা রবে ;  ০০০০০ "হে অরণ্য ! তুমি দেখতে দেখতে চোখের সামনে থেকে হারিয়ে যাও। তুমি যে কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত তা তো পরিমাপের বাইরে। এ যেন তোমার সীমাহীন রোম...

২৮৯ ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন -নবম পর্ব

  ২৮৯    ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন -নবম    পর্ব   ভারতীয় সাহিত্যে প্রকৃতির প্রভাবের পরম্পরা কিংবা প্রকৃতি কেন্দ্রীক  প্রাচীন সাহিত্যের অসঙ্খ্য নিদর্শন  আছে। কিভাবে মহাকবি কালিদাস শুধুমাত্র  প্রত্যাশার প্রতিরূপ মেঘ নিয়ে একটা গোটা খন্ড কাব্য লিখে ফেললেন।  সেই আলোকে আমাদের  অন্বেষণ, নবীন মেঘদুতর উপর প্রবীণ বেদ ও রামায়নের কতখানি আশীর্বাদ বর্ষিত হয়েছিল।   একটি রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সংবিধান যেমন পথের দিশা দেখায় , ঠিক তেমনি বেদও  এমন একটা শ্রুতি, যার ভিত্তি ছিল বিশ্ব সৃষ্টির রহস্যের আঁধারে দেবতা, ধর্ম, অধ্যাত্বিকতা ও নৈতিকতার উপর ভিত্তি করে আগামীদিনের সমাজের আচরণ কি হওয়া উচিত তার পূর্ণাঙ্গ একটা মানচিত্র। যে চারাটা একদিন প্রোথিত হয়েছিল বেদের উর্বর জমিতে, সে রামায়ণে গিয়ে ফুলে ফলে  বিকশিত হয়ে ধর্ম ও নৈতিকতার এক বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।  বেদ যদি মননে  হয়, তাহলে রামায়নের রাম হল তার স্বার্থক প্রয়োগ। বেদে "ঋত" শব্দটির অর্থ হলো যে শত পরিবর্তনের মধ্যে সে অম্লান থাকে , সে চিরন্তন সত্য ও ন্য...

২৮৮ ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন -অষ্টম পর্ব

২৮৮    ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন -অষ্টম    পর্ব   শ্লোকের উৎপত্তি সম্পর্কে রামায়ণের ' আদিপর্বে ' একটি ঘটনা আছে। প্রসঙ্গত ভারতের প্রাচীন সাহিত্যের সৌধটি এই শ্লোকের উপর নির্ভর করে তার ইমারত  গড়ে তুলে ছিল।  গঙ্গার থেকে খানিকটা দূর দিয়ে ত মসা নদীর  জল ধীরে ধীরে বয়ে যাচ্ছে।  নদী পার্শবর্তী অঞ্চলকে ঘিরে রেখেছে সুদৃশ্য বনানীর দল, ইতি উতি যেখানেই চোখ পরে সেখানেই পাখির মেলা বসেছে।  তমসা নদীতে স্নান করতে এসে হঠাৎ ঋষি বাল্মীকির নজরে এলো, অন্তরঙ্গ প্রেমে  মগ্ন  এক  বক দম্পতি মিথুনে আবিষ্ট থাকার চিত্রটি। যেখানে পাখির সমারোহ সেখানে ব্যাধের উপস্থিতি থাকাটাই ভীষণ স্বাভাবিক। বেরসিক ব্যাধের নূন্যতম চেতনা ছিল না যে সৃষ্টি সুখের আনন্দে যারা বিভোর তাদের তপস্যায় ব্যাঘাত ঘটাতে নেই।  কিন্তু অপরিণামদর্শী ব্যাধ, অচিরেই ধনুকের ছিলায় তীর বসিয়ে পুরুষ বকটিকে আঘাত করে। সেই মৃত্যুবানে শেষবারের মতো পাখাগুলি আন্দোলিত করতে করতে  তার   শরীরটা মাটিতে পরে গিয়ে মৃত্যুকালীন যন্ত্রনায় ছটপট করতে লাগলো। সেই দেখে স্ত্রী বকট...

২৮৭ ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন -সপ্তম পর্ব

২৮৭    ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন -সপ্তম   পর্ব   পরাধীনতার নোনতা স্বাদ নিতে নিতে ক্লান্ত জাতি অমৃত ভাণ্ডারের খোঁজে এগোতে গিয়ে দেখে,  সম্মুখে সমর আর পিছনে প্রাচীন কৃষ্টির অহংকার , এই দুইয়ের মধ্যে প্রাচীন কথকতার অহংকারকে পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে এসে জাতির বোধকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা চালালো। বলল, হে ভারতবাসী দেখ, আমরা হতে পারি পরাধীন, কেননা আমাদের সংস্কৃতি শিখায়নি অপরের রাজ্য হরণ করতে, যা দুস্যুবৃত্তির সামিল। তাই কোন কালে যুদ্ধবৃত্তি আমাদের গ্রাস করতে পারেনি, আমাদের ঋষি মুনিদের দৃষ্টি ছিল অন্তঃকরনের দিকে,  জগত সৃষ্টির কারণ জানতে  আর এই দুঃখময় পৃথিবীকে জয় করার মন্ত্র অনুসন্ধানে।  বেদের মতো সাহিত্যের আমরা উত্তরসূরি, বেদান্ত ও উপনিষদের মতো পৃথিবীর মানুষের অন্তরাত্মাকে শাসন করার মতো অস্ত্র আমাদের হাতে। হতে পারে তারা জোর করে রাজনৈতিকভাবে  শাসন করছে কিন্তু বিনা রক্তপাতে আমরা সমগ্র বিশ্বকে শাসন করবো শুধু মাত্র প্রেমের প্লাবনে।  শুধুমাত্র ধৈর্য্য প্রাথর্নীয়। কিন্তু সেই সাহিত্য ও দর্শনগুলির মাধ্যম ছিল সংস্কৃত, বর্তমানে সে প্রায় অতী...

২৮৬ ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন - ষষ্ঠ পর্ব

২৮৬    ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন - ষষ্ঠ   পর্ব   মহাকবি কালিদাস যদি মেঘদূত খন্ড কাব্যটি না লিখতেন , তাহলে  বিশ্বকবির বহু সৃষ্টিই  হয়তো অসম্পূর্ন থেকে যেত। কাব্য রচনা করে কোন কবি হয়তো বলে যাননি যে, সেই কাব্যটি রচনার পশ্চাতে তাঁর কি ভাবনা কাজ করেছে। পরবর্তী সময়ে সেই কাব্যটি পাঠ করে পাঠকের মনে কি প্রতিক্রিয়া হয়েছে, তাই নিয়ে কোন বিতর্ক হয়েছে বলে জানা নেই।  রবীন্দ্রনাথের কাছে কালিদাসের মেঘদূত নিয়ে এসেছে এক চিরন্তন বিরহের  প্রতিমূর্তি হিসাবে। যে  প্রেম নর-নারীর পার্থিব সম্পর্কের চিরাচরিত  গন্ডিকে পেরিয়ে আত্মার সাথে সংযোগ  স্থাপন করে, যা  সময়ের সীমা অতিক্রম করে সর্বকালের  হয়ে ওঠে। আত্মাকে নিরন্তর খোঁজার অব্যাহতি নেই। সেই যে কবে এই অন্বেষণ শুরু হয়েছিল আজও সে তার পথচ্যুত হয়নি।  সেখানে এই দক্ষ স্বরূপ  মানবেরা চিরকাল সেই অখিল সৌন্দর্য্যের প্রতিমূর্তি সেই যক্ষিনী, যার নিবাস এতই দূরে যে, সেখানে সশরীরে যাবার উপায় নেই।  সে হতে পারে প্রাণের একান্ত আত্মীয়, সেই আত্মাকে না পেয়ে যুগযুগান্ত ধরে বিরহে কাতর।...

২৮৫ ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন - পঞ্চম পর্ব

২৮৫  ইতিহাসের পূর্ণ আলোকে মেঘদূত দর্শন - পঞ্চম   পর্ব   দক্ষকে কুবেরের দেওয়া  শাপটি কিভাবে একটা ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের  কারণ  হয়ে উঠলো, যা  মহাকবির  কালিদাসের  আঙ্গুলি লেহনে, সেটা আজও বিরহের এক অনন্য  দৃষ্টান্ত হিসাবে আলোচিত।  কুবেরের রাজত্বে দক্ষ একজন সামান্য কর্মচারী, যার কাজ ছিল কুবেরের শিব পূজার উপকরন হিসাবে ফুল তুলে দেবার। একদিন তিনি তার প্রিয়ার সাথে প্রেমের সাগরে হাবুডুবু খেতে খেতে তার নির্দ্দিষ্ট কাজকেই ভুলে গিয়েছিলেন। ব্যাস ! আর যায় কোথায় ,  কুবের তাৎক্ষণিক শাপ দিলেন,  যে কারণে সে কর্তব্যে অবহেলা করেছেন, দক্ষের সেই দুর্বল জায়গায় আঘাত দিয়ে এক বছর মেয়াদী তার প্রিয়ার সাথে বিচ্ছেদের  একটা  পরোয়না জারি করেদিলেন।   শাপ পর্বের দিন, মাসগুলিও ধীরে ধীরে অতিক্রান্ত হয়ে যায়, ধিকি ধিকি করে কামাগ্নির তীব্রতা সহ্যের শেষ প্রান্তে পৌঁছে যায়। আবার, পাশাপাশি যক্ষ মনে মনে আতঙ্কিত হয়ে উঠে, তার প্রিয়া যেন তার বিরহে  দেহত্যাগ করে না বসে। তাই বর্ষণসিক্ত আষাঢ় মাসে কালবিলম্ব না করে মেঘকে দিয়ে খবর পাঠায়...